ডায়রিয়া একটি পানিবাহিত রোগ। গ্রীষ্মকালে প্রচন্ড গরমে এবং বর্ষাকালে এই রোগের প্রাদুর্ভাব অনেকাংশে বেড়ে যায় । যার কারণে প্রতি বছর অসংখ্য লোক বিশেষ করে শিশুরা মৃত্যুমুখে পতিত হয়।
আই সি ডি ডি আর বি (ICDDR,B) হতে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী – বাংলাদেশের শতকরা ২৫ ভাগ শিশু ডায়রিয়ার কারণে মারা যায়। প্রোটজোয়া কিংবা রোটা ভাইরাস জনিত ডায়রিয়া যার অন্যতম প্রধান কারণ। সুনির্দিষ্ট ভাবে রোগ নির্ণয় ও দ্রুত চিকিৎসার মাধ্যমে মূল্যবান জীবন রক্ষা করা সম্ভব।
(Reference : Health and Science Bulletin Vol 4 No 1, March 200,6 ICDDR,B)
স্বাভাবিক ভাবে শিশুর পাতলা পায়খানা হলেই তাকে ডায়রিয়া নামে অভিহিত করা হয়। কিন্তু চিকিৎসা বিজ্ঞানে ডায়রিয়া বলতে একটু ভিন্ন অর্থ বোঝায়। যদি কারো দিনে ৩ বা তার অধিকবার পানির মত তরল পায়খানা হয় অথবা কেউ যদি তার স্বাভাবিক বারের বেশি পানির মত তরল পায়খানা করে তবে তাকেই ডায়রিয়া বলা হয়।
“Diarrhoea is the passage of 3 or more loose or liquid stools per day, or more frequently than is normal for the individual”-WHO
ডায়রিয়ার প্রকারভেদ:
সাধারণত ডায়রিয়া কে তিনটি ভাগে ভাগ করা যায় :
১. Acute watery diarrhoea – যে ডায়রিয়া কয়েক ঘন্টা থেকে কয়েক দিন পর্যন্ত থাকতে পারে।
২. Acute bloody diarrhoea – এই ডায়রিয়াকে dysentery ও বলা হয়।
৩. Persistent diarrhoea – যে ডায়রিয়া ১৪ দিন পর্যন্ত বা তার বেশি সময় ধরে থাকে।
ডায়রিয়ার কারন:
তিন ধরনের জীবানু দ্বারা ডায়রিয়া হয়ে থাকে:
১। ভাইরাস
২। ব্যাকটেরিয়া, এবং
৩। প্রোটোজোয়া
এগুলো সাধারণত পচাঁ বাসি দূষিত খাদ্য, নোংরা পানি, মলমূত্র, মাছি প্রভৃতির মাধ্যমে ছড়িয়ে থাকে।
ডায়রিয়া সম্পর্কে কিছু তথ্য:
* ৫ বছরের নিচের শিশুদের মৃত্যুর ২য় প্রধান কারন হচ্ছে ডায়রিয়া রোগ।
* ডায়রিয়া রোগে প্রতি বছর ১.৫ মিলিয়ন শিশু মারা যায়।
* প্রতি বছর বিশ্বে ২ বিলিয়ন শিশু ডায়রিয়া রোগে আক্রান্ত হয়।
* ডায়রিয়া রোগে প্রধানত ২ বছরের নিচের শিশুদের বেশি আক্রান্ত করে।
* ৫ বছরের নিচের শিশুদের অপুষ্টির অন্যতম কারন ডায়রিয়া।
শিশুদের ডায়রিয়ার প্রধান কারণ হচ্ছে রোটা ভাইরাস। ৫ বছরের নিচের শিশুদের মধ্যে ৪০% শিশুরা ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয় রোটা ভাইরাস দ্বারা। ভাইরাল ডায়রিয়ার ক্ষেত্রে শিশুর আলাদা কোন চিকিৎসার তেমন প্রয়োজন হয় না। ৭-১০ দিনের মধ্যে আপনা আপনি রোটা ভাইরাস ডায়রিয়া ভালো হয়ে যায়। এক্ষেত্রে আলাদা কোন চিকিৎসা দিয়েও দ্রুত শিশুকে ভালো করে তোলার উপায় নেই। তবুও আমাদের দেশের লোকজন শিশুদের ডায়রিয়া হলেই অযথা এন্টিবায়োটিক খাইয়ে দ্রুত শিশুকে সুস্থ করতে চায়। এটা মোটেও করা উচিত নয়; উল্লেখ্য – এন্টিবায়োটিক শুধু ব্যাকটেরিয়া জনিত রোগে কাজ করে। আমাদের শরীরের নিজস্ব একটা প্রতিরোধ সিস্টেম আছে যা শিশুকাল থেকে বিভিন্ন রোগজীবাণুর সংস্পর্শে এসে প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরী করতে সহায়তা করে। অনর্থক এবং অযাচিত এন্টিবায়োটিক ব্যবহারে শিশুর লাভতো কিছুই হয় না বরং ক্ষতির কারনও হতে পারে।
ডায়রিয়া রোগে মৃত্যুর কারন:
ডায়রিয়া রোগে পানি শূন্যতা ও লবনের ঘাটতি দেখা দেয়। অধিক পরিমানে ডায়রিয়ার কারনে পানি শূন্যতা জীবনের জন্য হুমকি স্বরুপ হতে পারে ১. শিশু, ২. অপুষ্ট মানুষ, ৩. রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা কম যাদের – এমন মানুষদের জন্য। এই পানি শূন্যতা ও লবনের ঘাটতির কারনে রোগীর মৃত্যু পর্যস্ত হতে পারে।
ডায়রিয়া প্রতিরোধে করণীয়:
প্রতিকারের চেয়ে প্রতিরোধ উত্তম। নিম্নলিখিত পরামর্শগুলো মেনে চললে সহজেই ডায়রিয়া প্রতিরোধ করা সম্ভব।
১। পরিচ্ছন্ন অবস্থায় খাদ্য গ্রহন করুন
খাদ্য গ্রহনের পূর্বে সাবান দিয়ে হাত ভালোভাবে ধুয়ে নিন এবং পরিস্কার হাতে খাদ্যবস্তু ধরার অভ্যাস গড়ে তুলুন।
২। খাবার ঢেঁকে রাখুন
খাদ্যবস্তু ও খাবার সরঞ্জাম সবসময় ঢেঁকে রাখতে হবে যাতে মাছি বা পোকামাকড় বসতে না পারে।
৩। পরিস্কার পাত্রে খাদ্য গ্রহন করুন
খাওয়ার পূর্বে থালা বাসন পরিস্কার পানিতে ধুয়ে ফেলুন।
৪। জীবানু মুক্ত বিশুদ্ধ পানি পান করুন
৫। বাসি ও পচাঁ খাবার খাবেন না
নষ্ট ও গন্ধ হয়ে যাওয়া, বাসি ও পচাঁ খাবার পরিহার করুন।
৬। স্যানিটারি পায়খানা ব্যবহার করুন
স্বাস্থ্যসম্মত পায়খানা ব্যবহার করুন এবং মল ত্যাগের পর সাবান বা ছাই দিয়ে ভালোভাবে হাত ধুয়ে ফেলুন।
৭। ব্যক্তিগত পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখুন
হাত ও পায়ের নখ সবসময় ছোট ও পরিষ্কার রাখুন।
৯। পরিবারের প্রতিটি সদস্যের পরিচ্ছন্নতা ও সচেতনতাই আপনার পরিবারকে ডায়রিয়া মুক্ত রাখতে সহায়তা করবে।
ডায়রিয়া হলে করণীয়:
ডায়রিয়া প্রতিরোধই সর্বোত্তম পন্থা। তারপরও ডায়রিয়া হয়ে গেলে অবহেলা না করে আপনার নিকটস্থ স্বাস্থ্যকেন্দ্রে যোগাযোগ করুন অথবা কোন চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহন করুন। অতিরিক্ত দ্রুত রোগমুক্তির চেষ্টা কিংবা অবহেলা কোনটিই করা অনুচিত। রোটা ভাইরাস ডায়রিয়ার ক্ষেত্রে ধৈর্য্য ধরে অপেক্ষা এবং ব্যাকটেরিয়া বা প্রোটোজোয়া ডায়রিয়ার ক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ঔষধ গ্রহনই ডায়রিয়ায় খারাপ পরিস্থিতির হাত থেকে আমাদের রক্ষা করতে পারে।
প্রকাশিত:
১. techtunes.com.bd
আই সি ডি ডি আর বি (ICDDR,B) হতে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী – বাংলাদেশের শতকরা ২৫ ভাগ শিশু ডায়রিয়ার কারণে মারা যায়। প্রোটজোয়া কিংবা রোটা ভাইরাস জনিত ডায়রিয়া যার অন্যতম প্রধান কারণ। সুনির্দিষ্ট ভাবে রোগ নির্ণয় ও দ্রুত চিকিৎসার মাধ্যমে মূল্যবান জীবন রক্ষা করা সম্ভব।
(Reference : Health and Science Bulletin Vol 4 No 1, March 200,6 ICDDR,B)
ডায়রিয়া কি বা কাকে ডায়রিয়া বলা হয়:
স্বাভাবিক ভাবে শিশুর পাতলা পায়খানা হলেই তাকে ডায়রিয়া নামে অভিহিত করা হয়। কিন্তু চিকিৎসা বিজ্ঞানে ডায়রিয়া বলতে একটু ভিন্ন অর্থ বোঝায়। যদি কারো দিনে ৩ বা তার অধিকবার পানির মত তরল পায়খানা হয় অথবা কেউ যদি তার স্বাভাবিক বারের বেশি পানির মত তরল পায়খানা করে তবে তাকেই ডায়রিয়া বলা হয়।
“Diarrhoea is the passage of 3 or more loose or liquid stools per day, or more frequently than is normal for the individual”-WHO
ডায়রিয়ার প্রকারভেদ:
সাধারণত ডায়রিয়া কে তিনটি ভাগে ভাগ করা যায় :
১. Acute watery diarrhoea – যে ডায়রিয়া কয়েক ঘন্টা থেকে কয়েক দিন পর্যন্ত থাকতে পারে।
২. Acute bloody diarrhoea – এই ডায়রিয়াকে dysentery ও বলা হয়।
৩. Persistent diarrhoea – যে ডায়রিয়া ১৪ দিন পর্যন্ত বা তার বেশি সময় ধরে থাকে।
ডায়রিয়ার কারন:
তিন ধরনের জীবানু দ্বারা ডায়রিয়া হয়ে থাকে:
১। ভাইরাস
২। ব্যাকটেরিয়া, এবং
৩। প্রোটোজোয়া
এগুলো সাধারণত পচাঁ বাসি দূষিত খাদ্য, নোংরা পানি, মলমূত্র, মাছি প্রভৃতির মাধ্যমে ছড়িয়ে থাকে।
ডায়রিয়া সম্পর্কে কিছু তথ্য:
* ৫ বছরের নিচের শিশুদের মৃত্যুর ২য় প্রধান কারন হচ্ছে ডায়রিয়া রোগ।
* ডায়রিয়া রোগে প্রতি বছর ১.৫ মিলিয়ন শিশু মারা যায়।
* প্রতি বছর বিশ্বে ২ বিলিয়ন শিশু ডায়রিয়া রোগে আক্রান্ত হয়।
* ডায়রিয়া রোগে প্রধানত ২ বছরের নিচের শিশুদের বেশি আক্রান্ত করে।
* ৫ বছরের নিচের শিশুদের অপুষ্টির অন্যতম কারন ডায়রিয়া।
শিশুদের ডায়রিয়ার প্রধান কারণ হচ্ছে রোটা ভাইরাস। ৫ বছরের নিচের শিশুদের মধ্যে ৪০% শিশুরা ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয় রোটা ভাইরাস দ্বারা। ভাইরাল ডায়রিয়ার ক্ষেত্রে শিশুর আলাদা কোন চিকিৎসার তেমন প্রয়োজন হয় না। ৭-১০ দিনের মধ্যে আপনা আপনি রোটা ভাইরাস ডায়রিয়া ভালো হয়ে যায়। এক্ষেত্রে আলাদা কোন চিকিৎসা দিয়েও দ্রুত শিশুকে ভালো করে তোলার উপায় নেই। তবুও আমাদের দেশের লোকজন শিশুদের ডায়রিয়া হলেই অযথা এন্টিবায়োটিক খাইয়ে দ্রুত শিশুকে সুস্থ করতে চায়। এটা মোটেও করা উচিত নয়; উল্লেখ্য – এন্টিবায়োটিক শুধু ব্যাকটেরিয়া জনিত রোগে কাজ করে। আমাদের শরীরের নিজস্ব একটা প্রতিরোধ সিস্টেম আছে যা শিশুকাল থেকে বিভিন্ন রোগজীবাণুর সংস্পর্শে এসে প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরী করতে সহায়তা করে। অনর্থক এবং অযাচিত এন্টিবায়োটিক ব্যবহারে শিশুর লাভতো কিছুই হয় না বরং ক্ষতির কারনও হতে পারে।
ডায়রিয়া রোগে মৃত্যুর কারন:
ডায়রিয়া রোগে পানি শূন্যতা ও লবনের ঘাটতি দেখা দেয়। অধিক পরিমানে ডায়রিয়ার কারনে পানি শূন্যতা জীবনের জন্য হুমকি স্বরুপ হতে পারে ১. শিশু, ২. অপুষ্ট মানুষ, ৩. রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা কম যাদের – এমন মানুষদের জন্য। এই পানি শূন্যতা ও লবনের ঘাটতির কারনে রোগীর মৃত্যু পর্যস্ত হতে পারে।
ডায়রিয়া প্রতিরোধে করণীয়:
প্রতিকারের চেয়ে প্রতিরোধ উত্তম। নিম্নলিখিত পরামর্শগুলো মেনে চললে সহজেই ডায়রিয়া প্রতিরোধ করা সম্ভব।
১। পরিচ্ছন্ন অবস্থায় খাদ্য গ্রহন করুন
খাদ্য গ্রহনের পূর্বে সাবান দিয়ে হাত ভালোভাবে ধুয়ে নিন এবং পরিস্কার হাতে খাদ্যবস্তু ধরার অভ্যাস গড়ে তুলুন।
২। খাবার ঢেঁকে রাখুন
খাদ্যবস্তু ও খাবার সরঞ্জাম সবসময় ঢেঁকে রাখতে হবে যাতে মাছি বা পোকামাকড় বসতে না পারে।
৩। পরিস্কার পাত্রে খাদ্য গ্রহন করুন
খাওয়ার পূর্বে থালা বাসন পরিস্কার পানিতে ধুয়ে ফেলুন।
৪। জীবানু মুক্ত বিশুদ্ধ পানি পান করুন
৫। বাসি ও পচাঁ খাবার খাবেন না
নষ্ট ও গন্ধ হয়ে যাওয়া, বাসি ও পচাঁ খাবার পরিহার করুন।
৬। স্যানিটারি পায়খানা ব্যবহার করুন
স্বাস্থ্যসম্মত পায়খানা ব্যবহার করুন এবং মল ত্যাগের পর সাবান বা ছাই দিয়ে ভালোভাবে হাত ধুয়ে ফেলুন।
৭। ব্যক্তিগত পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখুন
হাত ও পায়ের নখ সবসময় ছোট ও পরিষ্কার রাখুন।
৮। আপনার শিশুকে রোটা ভাইরাসের টিকা প্রদান করুন
৯। পরিবারের প্রতিটি সদস্যের পরিচ্ছন্নতা ও সচেতনতাই আপনার পরিবারকে ডায়রিয়া মুক্ত রাখতে সহায়তা করবে।
ডায়রিয়া হলে করণীয়:
ডায়রিয়া প্রতিরোধই সর্বোত্তম পন্থা। তারপরও ডায়রিয়া হয়ে গেলে অবহেলা না করে আপনার নিকটস্থ স্বাস্থ্যকেন্দ্রে যোগাযোগ করুন অথবা কোন চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহন করুন। অতিরিক্ত দ্রুত রোগমুক্তির চেষ্টা কিংবা অবহেলা কোনটিই করা অনুচিত। রোটা ভাইরাস ডায়রিয়ার ক্ষেত্রে ধৈর্য্য ধরে অপেক্ষা এবং ব্যাকটেরিয়া বা প্রোটোজোয়া ডায়রিয়ার ক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ঔষধ গ্রহনই ডায়রিয়ায় খারাপ পরিস্থিতির হাত থেকে আমাদের রক্ষা করতে পারে।
প্রকাশিত:
১. techtunes.com.bd